ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে যান নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া (২০)। দেশীয় দালালদের প্রতারণায় তিনি পাড়ি জমান রাশিয়ায়, যেখানে তাকে ঠেলে দেওয়া হয় ভয়াবহ যুদ্ধে। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় বাহিনীর এক হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার (৩ মে) তার পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
হাবিবুল্লাহ শিবপুর উপজেলার আয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়া গ্রামের আবু সিদ্দিক ভূঁইয়া ও মানসুরা বেগমের ছোট ছেলে। পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।
পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, হাবিবুল্লাহকে ইতালি নেওয়ার আশ্বাসে প্রথমে সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসায় পাঠানো হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। পরে তাকে তুরস্ক হয়ে রাশিয়ায় নেওয়া হয় এবং ২০ লাখ টাকায় তাকে রুশ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয় দালালরা। সেখানে তিনি অমানবিক কষ্ট ও নির্যাতনের শিকার হন।
হাবিবুল্লাহর বাবা আবু সিদ্দিক বলেন, “আমার ছেলে ইউরোপ যেতে চেয়েছিল, কিন্তু দালালরা তাকে যুদ্ধের মাঠে পাঠিয়েছে। টাকার লোভে তারা আমার ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”
ছেলের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন তার মা মানসুরা বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ছেলে দেশে ফেরার জন্য কাঁদত। আজ তাকে লাশ হয়ে ফিরতে হবে? আমি এই দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, ছেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।”
জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ হাবিবুল্লাহ রাশিয়ান বাহিনীর ৪৫ সদস্যের একটি ইউনিটের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে বিশ্রামের সময় ইউক্রেনীয় সেনাদের অতর্কিত হামলায় তিনি নিহত হন।
হাবিবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাইম ইসলাম অভি জানান, মাঝে মাঝে রাশিয়া থেকে হাবিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ হতো। তিনি বলেন, “ওকে প্রতারণা করে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে। আমরা চাই দালালদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী জানান, “আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু পাইনি। পরিবার আমাদের তথ্য দিলে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
⸻ সত্য ও নির্ভরযোগ্য সংবাদের জন্য চোখ রাখুন — নিউজফ্রন্টলাইন বিডি।