আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। ঘোষিত এই তালিকাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মাঝে সামান্য অসন্তোষ দেখা দিলেও, দলটির হাইকমান্ড বলছে—এসব সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান হচ্ছে। ফলে তালিকায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেই দলটির।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রয়োজন বিবেচনায় সীমিত সংখ্যক আসনে পরিবর্তন আনা হতে পারে, তবে সেটি হবে খুবই সামান্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে কিছু মতবিরোধ থাকলেও তা সংগঠনিকভাবে দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেন বা বৈঠকের বিষয়ে অবহিত ছিলেন বলে জানা গেছে। সেখানে শরিক দলের সঙ্গে আসন বণ্টন, নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং প্রার্থী যাচাই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘোষিত তালিকার যেসব প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন নেই, সেগুলো অপরিবর্তিত থাকছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দিয়ে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনে কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। প্রার্থিতা নিয়ে দু-এক জায়গায় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, তবে দলের উদ্যোগে সেগুলো ধীরে ধীরে সমাধান হচ্ছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে জয়ী করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”
শরিকদের আসন বণ্টন ও জোট রাজনীতি
বিএনপি জানিয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে দ্রুত আসন বণ্টন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) অনুযায়ী জোট শরিকদের নিজস্ব প্রতীকে ভোটে অংশ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বিএনপিকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।
জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদের জন্য ৫৯টি আসন ছেড়েছিল বিএনপি, তবে এবার ২৫–৩০টি আসন ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া ফাঁকা রাখা ৬৩টি আসনের কিছু অংশ নিজেদের প্রার্থীদের জন্যও সংরক্ষিত থাকবে।
অন্যদিকে, গণতন্ত্র মঞ্চসহ ছয় দলীয় জোটের সঙ্গে অর্ধশত আসনে সমঝোতার আলোচনা চলছে। বিএনপির কাছে ইতিমধ্যে যুগপৎ শরিকদের পক্ষ থেকে ১০৩ জন প্রার্থীর তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। এসব তালিকা যাচাই করে শর্টলিস্ট তৈরি করেছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন, এরপর শরিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসবেন।
এনসিপির সঙ্গে আলোচনা ও দ্বিধা
অভ্যুত্থানের প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র সঙ্গেও বিএনপির আলোচনার খবর পাওয়া গেছে। যদিও স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
তাদের মতে, ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের সরাসরি সরকারের অংশ করে নেওয়া রাজনৈতিকভাবে সঠিক পদক্ষেপ নাও হতে পারে।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“রাজনীতিতে কোনো বিষয়েই শেষ কথা বলা যায় না। এনসিপির সঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, তবে সমঝোতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”